Wednesday, December 25, 2019

Hidden Technique of cutting calligraphy pen

কলম কাটার রহস্য










পৃথিবীর বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফারগণের অসাধারণ ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম এবং মনমুগ্ধকর লেখনির রহস্য লুকিয়ে আছে তাদের কলম কাটার ভিন্নতা ও ধরণের ওপর।

কারো লেখায় হরফগুলো বলিষ্ঠ এবং পুষ্ট হয়। কারো লেখায় হরফগুলো বেশি নমনীয় কমনীয় ও ঢেউয়ের মত ছন্দময় দেখা যায়। ক্যালিগ্রাফারদের কলমগুলো তাই দেখতে বিভিন্ন রকম হয়। বিশেষকরে কলমের নিব ও কত্ ভিন্ন রকম হয়। কলমের মাথা কাটা এবং ছাটা আর সবশেষে ঘষে তা মসৃণ করার দক্ষতার ওপর লেখার মান শৈল্পিক ও নিপুন হয়। এছাড়া হাতের গঠনের সাথে কলমের নিবের কতের ডিগ্রি নির্ভর করে।
কত্ কি? কত্ হল কলম কেটে শেষ ধাপে “এক কোপে মাথা কাটাকে কত্ বলে” এই কাটাটা কত ডিগ্রি কোণ বরাবর হবে বা ডানহাতী নাকি বামহাতী সেটা অনুযায়ী কাটা হবে। কাটার পর কালিতে চুবিয়ে বর্গাকার নোকতা দিয়ে দেখতে হয়, কাটাটা সঠিক হল কি না, চারকোনা এই বর্গাকার নোকতাকেও কত্ বলে। যেমন আমরা সুলুস শৈলিতে আলিফের হাজম মানসুব (আকার ও আকৃতি) নিজাম আল-নুকাতে( নোকতা পদ্ধতি) কেমন হবে সেটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলি- রস বা মাথা পাশাপাশি এক কত্ এবং এরতেফা(উপর-নিচ) দুই কত্ হবে আর জিসম বা দেহ এরতেফাহ হবে পাঁচ থেকে সাত কত্ ।
কলম কাটার ব্যাপারে প্রথম যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয়, সেটা হল কাটার সময় কলমের মাথা তার শিড়দাড়া বরাবর সোজা থাকে। সুতরাং মাথার ভেতর অংশ ও দুপাশ সমান ভাবে ছাটাই করতে হয়। অনেকেই বলেন, তার কলমটি ব্যবহারে মোটেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। হযরত আলী রা. বলেছেন, কলমের জিলফা( ঘাড় থেকে ঠোট পর্যন্ত) লম্বা করো, তাহলে তোমার লেখা সুন্দর হবে। কলমের কত্ কত ডিগ্রি বরাবর হবে? বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার বাদাবি আল-দিরানি বলেন, কত্ ৪৫ ডিগ্রি বরাবর হওয়া ভাল। তবে হাতের কবজি ও আঙ্গুলের গঠনের ওপর কৌণিক অবস্থান হেরফের হয়। এছাড়া শৈলি ভেদে কলমের কতের ডিগ্রি বদলে যায়। বাণিজ্যিকভাবে উৎপণ্য কাঠ বা মেটাল কলমগুলো ফ্লাট বা ৪৫ ডিগ্রি বরাবর হয়ে থাকে। সুতরাং বাজার থেকে কেনা কলম দিয়ে মনমত লেখা পাওয়া কঠিন। এজন্য ক্যালিগ্রাফারগণ নিজেরাই কলম বানিয়ে লিখে থাকেন।



ইবনে বাওয়াবকে কলম কাটার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি হেসে বলেন, আমি এটা সবসময় লুকিয়ে কেটে থাকি, আমি চাই না কেউ আমার কলম কাটার টেকনিক দেখে ফেলুক। তবে ইয়াকুত আল মুস্তাসিমী কলমকে তির্যক করে কাটার প্রচলন করেন এবং ক্যালিগ্রাফিতে বিপ্লব সাধিত হয়।
কলমের কত্ দুই রকম। এক. কত্তাহ মুহাররফাহ দুই. কত্তাহ মুসতাবিয়াহ।

কলমের দাত যখন ডান দিকে রাখা হবে বা বাম দিকে রাখা হবে কিংবা সেটা হেলে থাকে তাকে মুহাররফাহ বলে, অর্থাৎ হরফের চাহিদা অনুযায়ী কলমের কৌণিক ধরণ হেরফের হওয়া।
আর ফ্লাট মাথার নিব কাটাকে কত্তাহ মুসতাবিয়াহ বলে।
আমার মতে, কলম কাটা কেমন তা দর্শকের কোন প্রয়োজন নেই। দর্শক ক্যালিগ্রাফি সুন্দর চায়। সুতরাং ক্যালিগ্রাফার হতে চাইলে আপনাকে কলম কাটায় দক্ষ হতে হবে আর প্রত্যেক ক্যালিগ্রাফারের কলম কাটায় নিজস্ব কিছু রহস্য আছে।
ইবনে মুকলা বলেন, একটি ভাল কলম হচ্ছে, যার দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ১২ আঙ্গুল বরাবর হবে। আর কলমটি শক্ত পোক্ত হতে হবে। কলমটি তেড়া বাকা হওয়া উচিত নয়। কলমে অবশ্যই গিট কম হবে। বেশি গোস্তওলা দেহ হবে কিন্তু মাথাটা ভঙ্গুর হবে না। পাহাড় আর মরুভূমি মাঝ এলাকার নাবাত বা নলখাগড়ার কলম ভাল।
শেষ কথা হল, আপনাকে কলম কাটার বিষয়ে যথাযথ ইলিম অর্জন করতে হলে অবশ্যই একজন সনদধারী ক্যালিগ্রাফারের কাছে যেতে হবে।


No comments:

Post a Comment